অভিনেতা শাহরুখ খান একটি পুরানো
সাক্ষাতকারে প্রকাশ করেছিলেন যে, চাঁদে তার জমি রয়েছে।
আপনি যদি সুশান্ত সিং রাজপুতের
ভক্ত হন তাহলে তো নিশ্চয়ই জানেন, ২০১৮ সালে উনি চাঁদে জমি কিনেছিলেন। আর মাঝে মধ্যেই
তিনি তার টেলিস্কোপের সাহায্যে চাঁদের সেই অংশ খুঁজে বেড়াতেন।
এছাড়া কেউ চাঁদে জমি কিনছে একথা
মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। যেমন, কিছুদিন আগে রাজাস্থানের এক ব্যক্তি চাঁদে জমি কিনেছিলেন
এবং শোনা গিয়েছিল এক বাঙালি চাঁদে জমি কিনে তাঁর স্ত্রীকে গিফট করেছিলেন। এইধরনের কঠিন
কাজ একমাত্র বাঙ্গালীরাই পারে।
যাইহোক আমি মজা করছিলাম, কিন্তু
প্রশ্ন হল যে, কে বা কোন সংস্থা চাঁদে জমি বিক্রি করে এবং কীভাবে।
আর আপনি যদি চাঁদে জমি কিনতে
চান তাহলে তার জন্য আপনাকে কি করতে হবে এবং কত মূল্য দিতে হবে। আর সব থেকে বড় প্রশ্ন,
চাঁদে জমি কেনা কি লিগ্যাল।
আজকে এইসব বিষয়েই বিস্তারিত
বলব। খুবই ইন্টারেস্টিং হবে। এছাড়া আমার কি চাঁদে জমি আছে। শেষে সেটাও
বলব।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক,
১৯৮০ সালে এক ব্যাক্তির কাছে
কোন চাকরি ছিল না। উনি প্রায় এক বছর ধরে বেকার ছিলেন এবং চাকরির খোঁজ করছিলেন। এমন
সময় একদিন উনি যখন জানালার ধারে বসে চিন্তা করছিলেন, তখন তার চাঁদের দিকে নজর পড়ে।
আর তখনই তার মাথার মধ্যে বিদ্যুতের মতো এক ফন্দি খেলে যায়। ওই ব্যক্তি পলিটিক্যাল সায়েন্সের
একজন ছাত্র ছিলেন। কলেজে ছাত্র থাকাকালীন তিনি একটি চুক্তির ব্যাপারে পড়েছিলেন। এই
চুক্তি ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারী ইউ এস এ, ইউ কে এবং তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে
হয়েছিল। পরে এই চুক্তিতে ভারত সহ মোট ১০৯ টি দেশ সহমত হয়েছিল, যেটা আউটার স্পেস ট্রিটি
নামে পরিচিত। এতে আউটার স্পেস অর্থাৎ মহাকাশ বা মহাকাশীয় বস্তু সম্পর্কে অনেকগুলি নিয়ম
তৈরি করা হয়েছিল, যেগুলো পৃথিবীর সমস্ত দেশের জন্যই প্রযোজ্য। চুক্তিতে চাঁদ ও অন্যান্য
গ্রহ বা মহাজাগতিক বস্তু সম্পর্কেও কিছু নিয়ম লেখা ছিল, যার মধ্যে একটি হল যে, চাঁদ
বা কোন মহাজাগতিক বস্তু কোন দেশেরই সম্পত্তি নয়। প্রত্যেক দেশ শুধুমাত্র গবেষণা ও মানব
সভ্যতার উন্নতির জন্য চাঁদ, অন্যান্য গ্রহ ও মহাজাগতিক বস্তুকে ব্যবহার করতে পারবে।
ওই ব্যক্তি এই নিয়মের মধ্যে একটি লুপহোল খুঁজে পান। তারপরই উনি ইউনাইটেড ন্যাশনকে একটি
চিঠি লেখেন। সেই চিঠি অনুযায়ী, তিনিই চাঁদের মালিক। কারণ চুক্তির নিয়মে বলা হয়েছে,
চাঁদ বা গ্রহগুলো কোন দেশের সম্পত্তি নয়, কিন্তু তা যে কোন ব্যক্তির নয়, একথা বলা হয়নি।
আর এর ভিত্তিতেই তিনি চাঁদের মালিকানা দাবি করেন। এরপর ইউনাইটেড ন্যাসন্স, এর বিরুধে
কোন কিছু বলেনি বা কোন স্টেপ নেয়নি। তারপর থেকে অর্থাৎ ১৯৮০ সাল থেকেই ওই ব্যাক্তি
চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের জমি বিক্রি করতে থাকেন। আগে এক একর চাঁদের জমির দাম ছিল প্রায়
১৯-২০ ডলার। আর এখন লুনার ট্যাক্স যোগ হওয়ার পর সেই দাম ৩৬ ডলারে গিয়ে পৌঁছেছে, যা
বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, প্রায় ৩০০০ টাকার সমান। তিনি এখনও পর্যন্ত
প্রায় ৩.৭ মিলিয়নের ওপর মানুষকে চাঁদ, মঙ্গল ও অন্যান্য গ্রহের জমি বিক্রি করেছেন।
এমনকি আপনি জানলে অবাক হবেন,
ওই ব্যক্তি প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকেও চাঁদের জমি বিক্রি করেছেন। এছাড়া
টম ক্রুস, নিকোল কিডম্যান সহ আরও অনেক সেলিব্রিটিও চাঁদে জমি কিনেছে।
একইভাবে সুশান্ত সিং রাজপুতও
চাঁদে জমি কিনেছিলেন। এরপর তিনি হয়েছিলেন প্রথম ভারতীয় অভিনেতা যার চাঁদে জমি ছিল।
এবার আপনি বলবেন উনি কিকরে প্রথম অভিনেতা হলেন, শাহরুখ খানের তো ২০০৯ সাল থেকেই চাঁদে
জমি আছে। আসলে পার্থক্যটা হল, কিং খানকে চাঁদের জমি গিফট করা হয়েছিল কিন্তু সুশান্ত
সিং নিজে চাঁদের জমি কিনেছিলেন।
আসলে শাহরুখ খানের ৪৪ তম জন্মদিনে
তাঁর দুই অস্ট্রেলিয়ান মহিলা ভক্ত ওনাকে চাঁদের একখণ্ড জমি উপহার দিয়েছিল।
তবে প্রথম যিনি এই ব্যবসা শুরু করেন, তাঁর নাম ডেনিস হোপ এবং ওনার সংস্থার নাম লুনার এম্বেসি। আপনি যদি নিজের জন্য চাঁদে জমি কিনতে চান, বা আপনার সোনা মনাকে গিফট করতে চান, তাহলে আমি ডেসক্রিপশনে লুনার এম্বেসির লিঙ্ক দিয়ে দেব, সেখান থেকে আপনি চাঁদ সহ অন্যান্য গ্রহের জমি কিনতে পারবেন। আরে দাঁড়ান, তার আগে আসল কথাটা শুনে যান। আপনি কি জানেন এইসব জমি কেনা লিগ্যাল কিনা। দেখুন চাঁদে আপনি জমি কিনতেই পারেন, সেবিষয়ে কোন বাধা নেই। তবে ভবিষ্যতে, যদি চাঁদে সত্যি সত্যিই বসতি গড়ে ওঠে, তখন ওই কাগজের কোন মূল্য থাকবে কিনা সেটা বলা মুশকিল। যদিও সেইদিন এখনও বহুদূরে আর সম্ভাবনাও অনেক কম। ডেনিস হোপ, চাঁদ বা অন্যান্য গ্রহের যে জমি বিক্রি করে, সেটা তাঁর সংস্থা লুনার এমবেসির তৈরি একটি কাগজের টুকরো। আর এতে কোন দেশেরই কোন স্ট্যাম্প অর্থাৎ স্বীকৃতি নেই। কারণ চুক্তিতে মহাজাগতিক বস্তুকে শুধুমাত্র মানব কল্যানের কাজে লাগানোর জন্যই দেশগুলো সহমত হয়েছিল। তাই এটাকে কোন দেশই মান্যতা দেয় না।
এবার আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন
উঠছে যে, তাহলে মানুষ চাঁদে জমি কেনে কেন? আসলে যেমন আপনার কাছে আইফোন থাকলে অনেকের
কাছে আপনার মূল্য বেড়ে যায়, ঠিক তেমনই আপনার চাঁদে জমি আছে একথা শুনলেও, অনেকের কাছে
আপনার লেভেলটাই আলাদা হবে। আর আপনি যদি আপনার প্রিয়জনকে চাঁদের জমি গিফট করেন, তাহলে
তো কোন কথাই নেই। তবে সাবধান সে যদি কোনদিন চাঁদে নিয়ে যেতে বলে তাহলে কিন্তু মুশকিল।
সরি মজা করছিলাম। তবে আপনার যদি ইছে হয় তাহলে আপনি চাঁদে জমি কিনতেই পারেন। তো আপনি
কি কিনতে ইছুক, সেটা কমেন্ট করে জানান। এবং আপনার কি মনে হয় কেন মানুষ চাঁদে জমি কেনে,
সেটাও কমেন্ট করে জানান।
আর রইলো আমার কথা, তো আমি এখনও চাঁদে জমি কিনিনি। তবে ভবিষ্যতে ইউটিউব থেকে কিছু মালকড়ি পেলে হয়তো কিনতেও পারি।
0 Comments
Post a Comment