আমরা প্রায় সবাই লাইকার(Laika dog) নাম শুনেছি এবং লাইকার সম্বন্ধে কিছুটা হলেও জানি।লাইকা ছিল একটি কুকুর,যাকে প্রথম মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল অর্থাৎ প্রাণীদের মধ্যে লাইকা নামক কুকুরটিকেই প্রথম মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল।লাইকা ছিল রাশিয়ার মস্কো শহরের একটি কুকুর, যে রাস্তায় রাস্তায় ভবঘুরের মত ঘুরে বেড়াতো।এই নারী মঙ্গরেল কুকুরটি যখন পাওয়া গিয়েছিল তখন তার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর এবং ওজন প্রায় ৬ কেজি (১৩ পাউন্ড)।লাইকার পাশাপাশি আরো দুইটি কুকুরকে এই মহা অভিযানের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাইকাই নির্বাচিত হয়।কুকুরটির নাম প্রথমে লাইকা ছিল না।লাইকার আসল নাম "কুদরিয়াভকা"(Kudriavka)।প্রথম দিকে এর অনেকগুলি নাম রাখা হয়েছিল, যার মধ্যে লাইকা নামটি বেছে নেওয়া হয়।এর অর্থ হল "যে ঘেউ ঘেউ করে"।
লাইকা, প্রথম মহাকাশচারী প্রাণী |
লাইকার প্রশিক্ষণ এবং শেষ যাত্রাঃ
১৯৫৭ সালের ৩ রা নভেম্বর রাশিয়ার স্পুটনিক-২(sputnik 2) নামক মিশনের সাহায্যে এই প্রাণীটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়। মোট তিনটি কুকুরকে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নেওয়া হয়।স্পুটনিক-২ এর কেবিন খুব ছোট ছিল।এত ছোট জায়গায় থাকতে কুকুরদের অভ্যস্ত করার জন্য প্রায় কুড়ি দিন তাদেরকে এর থেকেও একটি ছোট্ট কক্ষে রাখা হয়েছিল।এত ছোট্ট ঘরে আটকে থাকার জন্য তাদের মল-মূত্র ত্যাগ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটায় তাদের অবস্থা স্বাভাবিকের তুলনায় খারাপ হয়ে গিয়েছিল।এছাড়া নভোযানের শব্দের সিমুলেশন করা একটি যন্ত্রের সাহায্যেও তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।এতে তাদের হৃদকম্পনের হার দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল এবং চাপ প্রায় ৩০-৬৫ টর বেড়ে গিয়েছিল।তাদেরকে এক ধরনের পুষ্টিকর জেল খাওয়ানো হতো।মহাকাশে এই জেলকেই তাদের খাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
অত্যধিক চাপ ও তাপমাত্রার কারণে উৎক্ষেপণের কয়েক ঘন্টা পরেই লাইকা মারা গিয়েছিল।তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কোন সমস্যা হওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।এই মহাকাশ অভিযানের কয়েক দশক পর লাইকার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ মানুষকে জানানো হয়েছিল।
লাইকা পুরো ভ্রমণের সময় বেঁচে না থাকলেও এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছিল যে,পৃথিবীর কক্ষপথে উৎক্ষেপিত মহাকাশযান ওজনহীন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীর পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব।এর মাধ্যমেই মনুষ্যবাহী নভোযান প্রকল্প শুরু হতে পেরেছিল।কোনো জীবের উপর মহাকাশের পরিবেশের প্রভাব কিরূপ হয় তাও লাইকার মাধ্যমেই জানা গিয়েছিল। উৎক্ষেপণ মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আগে এক বিজ্ঞানী লাইকাকে তার সঙ্গে করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন ।সোভিয়েত মহাকাশ চিকিৎসা বিষয়ে লেখা একটি কালপঞ্জিমূলক গ্রন্থে ডঃ ভ্লাদিমির ইয়াজদোভস্কি লিখেছেন, "আমি তার জন্য সুন্দর করে কিছু করতে চেয়েছিলাম, কারন তার আয়ু আর বেশি দিন ছিল না"।
নাসার একটি দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৫৭ সালের ৩১ শে অক্টোবর অর্থাৎ উৎক্ষেপণের তিন দিন আগেই লাইকাকে কৃত্রিম উপগ্রহটির ভেতর রাখা হয়েছিল।উৎক্ষেপণের দিন সেখানে প্রচন্ড শীত ছিল।এ কারণে একটি নমনীয় নলের ভেতর দিয়ে গরম জল প্রবাহিত করার মাধ্যমে লাইকার ধারকটিকে গরম রাখা হয়েছিল।উৎক্ষেপণের ঠিক আগে লাইকাকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে দুইজন সহকারি নিয়োগ করা হয়েছিল।
লাইকার অবদানঃ
২০০৮ সালের ১১ই এপ্রিল রুশ কর্মকর্তারা লাইকার সম্মানে একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করেছে।মস্কোর একটি সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কাছে এই ছোট্ট স্মৃতিসৌধটি অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানটিই মহাকাশে লাইকার অভিযানের সবকিছু প্রস্তুত করেছিল।রকেটের উপর একটি কুকুর দাঁড়িয়ে আছে, এটাই সৌধের নকশা।এছাড়া রোমানিয়ার একটি ডাকটিকিটে লাইকার ছবি এবং রাশিয়ার পোস্টাল স্ট্যাম্পে লাইকার নাম উল্লেখ ছিল।লাইকার অভিযান যখন উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, তখন জীবের উপর মহাকাশের প্রভাব খুব বেশি জানা যায়নি।এ কারনে অনেকেই বলেছিলেন, কোন জীবের পক্ষে মহাকাশে গিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তখন থেকেই রুশ প্রকৌশলীরা কুকুর প্রেরণকে মনুষ্যবাহী মহাকাশ অভিযানের পূর্বসূরী হিসেবে দেখে এসেছেন।এই অভিযানের পর থেকেই মানুষ মহাকাশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সফল হয়।লাইকার এই কষ্টকর যাত্রার জন্য আমরা সবাই দুঃখিত।তার এই অবদানের জন্য সমস্ত পৃথিবীবাসী তাকে সবসময় মনে রাখবে।স্পুটনিক-১ এবং স্পুটনিক-২ মিশন সম্পর্কে জানার জন্য কমেন্ট করুন।
মহাকাশচারনা Store:- www.amazon.in/shop/influencer-b8490df8
3 Comments
Bhaas valo topic
ReplyDeleteবাহ্, বেশ ভালো লাগলো পড়ে,,, 😊
ReplyDeleteIts full of information I am looking for and I love to post a comment that "The content of your post is awesome" Great
ReplyDeleterouge planet
Post a Comment