বৃহস্পতি গ্রহের মোট ৭৯ টি উপগ্রহ আছে। যার মধ্যে সবথেকে বড়
চারটি উপগ্রহ হল, গ্যানিমিড,
ইউরোপা, ক্যালিস্টো এবং আইও। বৃহস্পতি গ্রহকে পর্যবেক্ষণের জন্য পূর্বে অনেক মিশন পাঠানো
হয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, গ্যালিলিও, জুনো, ভয়েজার
১ ও ২ এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির জুস মিশন। এই মিশনগুলো বৃহস্পতি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি ওই উপগ্রহগুলোর
পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরও পর্যবেক্ষণ করেছিল। যদিও বৃহস্পতি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করাই
তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে জুস মিশনে গ্যানিমিড
ও ক্যালিস্টো উপগ্রহকেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
আপনি কি
জানেন খুব শীঘ্রই নাসা বৃহস্পতির ওই চারটি উপগ্রহের মধ্যে একটি উপগ্রহে মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে।
এই প্রথম শুধুমাত্র এই উপগ্রহের উদ্দেশ্যে কোন মহাকাশযান পাঠানো হবে।
কিন্তু নাসা হঠাৎ ওই উপগ্রহের উদ্দেশ্যেই মহাকাশযান পাথাছহে কেন, এই মিশন
কতদিন চলবে এবং কবে উৎক্ষেপণ করা হবে।
এর বাজেট কত এবং সবথেকে বড় প্রশ্ন হল নাসা কোন উপগ্রহে মিশন পাঠাবে।
আজকে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।তো চলুন জেনে নেওয়া যাক,
২০১১ সালের
৫ ই আগস্ট
নাসা বৃহস্পতি গ্রহের উদ্দেশ্যে জুনো মহাকাশযান পাঠিয়েছিল।
প্রায় ১১ বছর পর ২০২২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর মহাকাশযানটি যখন ইউরোপা উপগ্রহের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন এই উপগ্রহের বরফাবৃত উপরিতলের কয়েকটি ছবি তুলেছিল।
এরপরেই বিজ্ঞানীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং তারা এই উপগ্রহের ব্যাপারে গবেষণা শুরু করে দেয়।
তাদের ধারনা অনুযায়ী, এই উপগ্রহের বরফাবৃত উপরিতলের মধ্যে জল পাওয়া যেতে পারে।
সেই উদ্দেশ্যেই নাসা এইমাসে অর্থাৎ অক্টোবরের ১০ তারিখে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেস এক্সের ফ্যালকন রকেটের সাহায্যে একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করতে চলেছে।
এটি হবে প্রথম মিশন, যা শুধুমাত্র ইউরোপাকে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে।
মহাকাশযানটি প্রায় সাড়ে ৫ বছর মহাকাশে
ভ্রমণের পর ২০৩০ সালের এপ্রিল মাসে ইইউরোপার কক্ষপথের কাছে পৌঁছাবে।
এরপর ২০৩৪ সাল পর্যন্ত যানটি বারবার ওই উপগ্রহের পাশ দিয়ে যাবে এবং তথ্য সংগ্রহ করে বিজ্ঞানীদের পাঠাবে।
মহাকাশযানটিকে ওই
উপগ্রহর কক্ষপথে সরাসরি পাঠানো হবে না, কারণ বৃহস্পতি
গ্রহের রেডিয়েশন এই যানটিকে নষ্ট করে দিতে পারে।
এই মিশনের
প্রধান উদ্দেশ্য হল, ওই উপগ্রহে
জলের সন্ধান করা।
এছাড়া ইউরোপার পৃষ্ঠতল কিরকম, এটি কিধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি, এখানে কোন নদী বা সাগর আছে থাকতে পারে কিনা, ভবিষ্যতে এই উপগ্রহ মানুষের বসবাসযোগ্য হবে কিনা এবং এসম্পর্কিত আরও অনেক তথ্য সংগ্রহ করবে।
মহাকাশযানটির মধ্যে
প্রধানত একটি আইস পেনিট্রেটিং র্যাডার, একটি ম্যাগনেটোমিটার, একটি থার্মাল এমিশন ইমেজিং সিস্টেম এবং একটি মাস স্পেক্তমিটার থাকবে।
এই মিশনের
বাজেট প্রায় ৫.২
বিলিয়ন ডলার।
মিশনের নাম নাসা ক্লিপার মিশন।
ক্লিপার মিশন একটি উল্লেখযোগ্য মিশন, যা সৌরজগতের বিভিন্ন বরফাবৃত উপগ্রহের বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রথম ধাপ। এইসমস্ত উপগ্রহের মধ্যে শনি গ্রহের এন্সেলাডুস এবং ট্রাইত্রন উল্লেখযোগ্য। উন্নত টেকনোলজি এবং বিজ্ঞানীদের প্রতিনিয়ত চেষ্টার মাধ্যমে আমরা এইসমস্ত উপগ্রহের বিভিন্ন রহস্যের ব্যাপারে জানতে পারব। এছাড়া এই মিশনের সাহায্যে পূর্বের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যাবে।
0 Comments
Post a Comment